Friday, February 1, 2013

কালিজিরা স্বাস্থ্যগুন And চিরতার গুনের কথা

কালিজিরা স্বাস্থ্যগুন

(আজকের ২৪) পরিচিতি: Ranunculaceae গোত্রের উদ্ভিদ। লম্বায় ২০-৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর আদি নিবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া।
ধর্মীয় কারণঃ ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কালিজিরাকে একটি অব্যর্থ রোগ নিরাময়ের উপকরণ হিসাবে বিশ্বাস করে। এর সাথে একটি হাদিস জড়িত আছে। হাদিসটি হলো— '..আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “এ কালিজিরা সাম ব্যতীত সমস্ত রোগের নিরাময়। আমি বললাম: সাম কি? তিনি বললেন: মৃত্যু!” [বুখারী: ৫৬৮৭] আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য তিনি আমাদের কালোজিরা ও মধু সর্ম্পকে অবগত করেছেন।
 কি আছে কালোজিরায়: কালিজিরার তেলে ১০০টিরও বেশি উপযোগী উপাদান আছে। এতে আছে প্রায় ২১ শতাংশ আমিষ, ৩৮ শতাংশ শর্করা এবং ৩৫ শতাংশ ভেষজ তেল ও চর্বি। কালিজিরার অন্যতম উপাদানের মধ্যে আছে নাইজেলোন, থাইমোকিনোন ও স্থায়ী তেল। এতে আরও আছে আমিষ, শর্করা ও প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিডসহ নানা উপাদান। পাশাপাশি কালিজিরার তেলে আছে লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি২, নিয়াসিন ও ভিটামিন-সি। এর মধ্যে রয়েছে ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বো-হাইড্রেট ছাড়াও জীবাণু নাশক বিভিন্ন উপাদান সমূহ। এতে রয়েছে ক্যন্সার প্রতিরোধক কেরোটিন ও শক্তিশালী হর্মোন, প্রস্রাব সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক।
কালিজিরার স্বাস্থ্যগুন:
» তিলের তেলের সাথে কালিজিরা বাঁটা বা কালিজিরার তেল মিশিয়ে ফোড়াতে লাগালে ফোড়ার উপশম হয়।
» অরুচি, উদরাময়, শরীর ব্যথা, গলা ও দাঁতের ব্যথা, মাইগ্রেন, চুলপড়া, সর্দি, কাশি, হাঁপানি নিরাময়ে কালিজিরা সহায়তা করে। ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কালিজিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
» চুলপড়া, মাথাব্যথা, অনিদ্রা, মাথা ঝিমঝিম করা, মুখশ্রী ও সৌন্দর্য রক্ষা, অবসন্নতা-দুর্বলতা, নিষ্কিয়তা ও অলসতা, আহারে অরুচি, মস্তিষ্কশক্তি তথা স্মরণশক্তি বাড়াতেও কালোজিরা উপযোগী।
 » মাথা ব্যথায় কপালে উভয় চিবুকে ও কানের পার্শ্ববর্তি স্থানে দৈনিক ৩/৪ বার কালোজিরা তেল মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়।
 » কালোজিরা চূর্ণ ও ডালিমের খোসাচূর্ণ মিশ্রন, কালোজিরা তেল ডায়াবেটিসে উপকারী।
» চায়ের সাথে নিয়মিত কালোজিরা মিশিয়ে অথবা এর তেল বা আরক মিশিয়ে পান করলে হৃদরোগে যেমন উপকার হয়, তেমনি মেদ ও বিগলিত হয়।
» কফির সাথে কালোজিরা সেবনে স্নায়ুবিক উত্তেজনা দুরীভুত হয়।
 » মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও সকল রোগ মহামারী হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
» জ্বর, কফ, গায়ের ব্যথা দূর করার জন্য কালিজিরা যথেষ্ট উপকারী বন্ধু। এতে রয়েছে ক্ষুধা বাড়ানোর উপাদান। পেটের যাবতীয় রোগ-জীবাণু ও গ্যাস দূর করে ক্ষুধা বাড়ায়।
» সন্তান প্রসবের পর কাঁচা কালিজিরা পিষে খেলে শিশু দুধ খেতে পাবে বেশি পরিমাণে।
» কালিজিরায় রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোরিয়াল এজেন্ট, অর্থাৎ শরীরের রোগ-জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান। এই উপাদানের জন্য শরীরে সহজে ঘা, ফোড়া, সংক্রামক রোগ (ছোঁয়াচে রোগ) হয় না।
» কালিজিরা মেধার বিকাশের জন্য কাজ করে দ্বিগুণ হারে। কালিজিরা নিজেই একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক।
 » দাঁতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালিজিরা দিয়ে কুলি করলে ব্যথা কমে; জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু মরে।
» কালিজিরা কৃমি দূর করার জন্য কাজ করে।
» দেহের কাটা-ছেঁড়া শুকানোর জন্য কাজ করে।
» কালোজিরার যথাযথ ব্যবহারে দৈনন্দিন জীবনে বাড়তি শক্তি অজির্ত হয়। এর তেল ব্যবহারে রাতভর প্রশান্তিপর্ন নিদ্রা হয়।
» নারীর ঋতুস্রাবজনীত সমস্যায় কালিজিরা বাটা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
» প্রসূতির স্তনে দুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য, প্রসবোত্তর কালে কালিজিরা বাটা খেলে উপকার পাওয়া যায়। তবে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কালিজিরা খেলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে।
» প্রস্রাব বৃদ্ধির জন্য কালিজিরা খাওয়া হয়।
» বহুমুত্র রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং নিম্ন রক্তচাপকে বৃদ্ধি করে ও উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করে।
 » মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
 » মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত আছে যে, কালিজিরা যৌন ক্ষমতা বাড়ায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। তবে পুরানো কালিজিরা তেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

বলছি চিরতার গুনের কথা

(আজকের২৪) চিরতা বীরু জাতীয় গাছ। এর স্বাদ তেতো। নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধে চিরতা কার্যকর।
উপকারিতাঃ

 *ডায়রিয়া ও লিভারের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে চিরতার পানি ব্যবহৃত হয়।
*ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে ৫ থেকে ১০ গ্রাম চিরতা চার কাপ পানিতে সিদ্ধ করে দুই কাপ করুন। এরপর ওই পানি ছেঁকে সকালে অর্ধেক এবং বিকেলে অর্ধেক করে খেতে দিন। জ্বর ভালো হয়ে যাবে।
*অ্যালার্জিতে শরীর ফুলে উঠলে চিরতার পানি খেলে উপকার পাবেন। রাতে পাঁচ গ্রাম চিরতা ২৫০ মিলিলিটার গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে ওই পানি দু-তিনবারে খান; অ্যালার্জি কমবে।
*গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে বমিভাব হলে এক গ্রাম চিরতা গুঁড়া করে চিনির পানিতে মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়া ঘন ঘন বা জ্বরের কারণে বারবার বমি হয়ে পেটে কিছুই থাকে না। সে ক্ষেত্রে দুই কাপ গরম পানিতে পাঁচ গ্রাম চিরতা একটু থেঁতো করে ভিজিয়ে রাখুন। দু-তিন ঘণ্টা পর ছেঁকে পানিটা অল্প অল্প করে খান; সমস্যা থাকবে না।
*হাঁপানির প্রকোপ বেশি হলে আধা গ্রাম চিরতা গুঁড়া তিন ঘণ্টা পর পর মধু মিশিয়ে দুই থেকে তিনবার অল্প অল্প করে চেটে খান; হাঁপানির প্রকোপ কমবে।
*কৃমির উপদ্রব হলে ২৫০ থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত চিরতা অল্প মধু বা একটু চিনি মিশিয়ে খান; কৃমি কমবে। এ ছাড়া কৃমির কারণে যদি পেটে ব্যথা হয়, তাও সেরে যাবে।
*যেকোনো ধরনের চুলকানিতে ২০ গ্রাম চিরতা অল্প পানি দিয়ে ছেঁকে লোহার কড়াইয়ে সরিষার তেল গরম করে তাতে ভাজুন, যেন পুড়ে না যায়। এরপর নামিয়ে ছেঁকে অল্প অল্প করে নিয়ে চুলকানিতে ঘষে ঘষে লাগান। তিন দিনের মধ্যে চুলকানি কমে যাবে।
*চুল পড়ে যাওয়ায় তিন গ্রাম চিরতা এক কাপ গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেই পানি ছেঁকে মাথা ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়ে যাওয়া কমবে। তবে এক দিন পর পর চার দিন চুল ধুতে হবে। এ ছাড়া ২৫ গ্রাম চিরতা ফুল ২০০ গ্রাম নারিকেল তেলে ভেজে ওই তেল মাথায় ব্যবহার করুন। খুশকি বা স্কাল্পে কোপনো সমস্যা থাকলে সেরে যাবে।


চিরতার চমক
http://www.aperturenepal.com/gallery/ROOFING_211E7F7B_DSC_85590047.JPG

সময়ের অসুখগুলোর মধ্যে বসন্ত অন্যতম। দিনে গ্রীষ্মকালীন গরম আর ভোরে শীতকালের মতো ঠান্ডা। এই ঠান্ডা-গরমের সংমিশ্রণে বেড়েই চলছে বসন্তের জীবাণু, হাঁচি, কাশি, সর্দি, টনসিলে ইনফেকশনের পরিমাণ। এই অসুখগুলোর বিরুদ্ধে ৎকৃষ্ট হাতিয়ার হলো চিরতা। বাজারে চিরতার পাতলা ডালপালা বিক্রি হয়। এগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে গ্লাস বা বাটিতে পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে ওই পানি খেতে হয়। সংক্রামক অসুখগুলোর বিরুদ্ধেও রয়েছে চিরতার অগ্রণী পদক্ষেপ। চিরতা দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। গবেষণা করে দেখা গেছে, যাঁরা নিয়মিত তিতা খাবার খান, তাঁদের অসুখ হওয়ার প্রবণতা কম থাকে। যেকোনো কাটা, ছেঁড়া, ক্ষতস্থান দ্রুত শুকায়। ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য চিরতা ভীষণ জরুরি পথ্য। চিরতার রস দ্রুত রক্তে চিনির মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিস থাকে নিয়ন্ত্রণে। উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল, উচ্চরক্তচাপ, অতি ওজনবিশিষ্ট ব্যক্তির জন্যও চিরতা দরকারি। টাইফয়েড জ্বর হওয়ার পর আবারও অনেকের প্যারাটাইফয়েড জ্বর হয়। তাই টাইফয়েড জ্বরের পরে চিরতার রস, করলা খেলে যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়। চিরতার রস কৃমিনাশক, বীর্যবর্ধক হিসেবে কাজ করে। তারুণ্য ধরে রাখতেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। শরীরের ঝিমুনিভাব, জ্বরজ্বর লাগাএই সমস্যাগুলো দূর করে চিরতার রস। দেখতে কালচে কাঠির মতো। কিন্তু এর গুণ বহুবিধ। যারা নিয়মিত তিতা বা চিরতার রস খায়, তাদের ফুট পয়জনিং (খাবারের মাধ্যমে দেহে রোগজীবাণু ঢুকে দেহে অসুখ তৈরি করা) হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। ছাড়া চিরতা রক্ত পরিষ্কারক হিসেবেও কাজ করে। যাঁদের ডায়াবেটিস নেই কিন্তু রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় সর্বদা বেশি থাকে, তাঁদের জন্য চিরতা গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। সর্বোপরি বিবেচনায়, চিরতা হোক আপনার নিত্যসঙ্গী

 

 

No comments:

Post a Comment